ওয়ার্সির পদত্যাগে দলীয় এমপিদের বিদ্রোহের মুখে ডেভিড ক্যামেরন


 গাজা পরিস্থিতি নিয়ে তার অবস্থানের নিন্দা এবং লাখ লাখ ব্রিটিশ মুসলিমের আহত হবার বিষয় নিয়ে গত মঙ্গলবার রাতে টোরি এমপিদের বিদ্রোহের মুখে পড়েন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। গাজা যুদ্ধে নীরিহ ১৮শ’ ফিলিস্তিনির নিহত হওয়া রোধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হবার প্রতিবাদে ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার প্রথম মুসলিম সদস্য ব্যারনেস ওয়ার্সির পদত্যাগে এ বিদ্রোহের উদ্ভব হয়েছে। মন্ত্রিসভায় বড় ধরনের পরিবর্তনের এক সপ্তাহের মধ্যেই গাজায় ইসরাইলের সেনা অভিযান নিয়ে সরকারের অবস্থানে ক্ষুব্ধ হয়ে ‘গভীর অনুতাপের’ কারণে তিনি মন্ত্রিত্ব ছেড়েছেন বলে নিজের ট্যুইটার পাতায় উল্লেখ করেন তিনি।
জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী ও মুসলিম যুবকদের মধ্যে মৌলবাদের উত্থানের আশঙ্কা ব্যক্ত করে তার নাটকীয় প্রস্থান টোরি দলের সাবেক অনেক মন্ত্রীর বাহ্বা কুড়িয়েছে। লন্ডনের মেয়র বরিস জনসনও তার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন। তিনি অবলম্বে ইসরাইলের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়ে বলেন, গাজার চলমান সঙ্কট মুহূর্তে সরকারের অভিপ্রায় ও ভাষা নৈতিকভাবে ‘অগ্রহণযোগ্য’। 
চ্যান্সেলর জর্জ অসবর্ন সাইয়েদা ওয়ার্সির পদত্যাগে হতাশা প্রকাশ করে বলেছেন, যুদ্ধবিরতি হয়ে যাবার পর তার পদত্যাগ ছিল অপ্রয়োজনীয়। তার পদত্যাগ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের স্মরণানুষ্ঠান থেকে ফিরে পর্তুগালে হলিডে পালন করতে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের জন্য বড় ধরনের মাথাব্যথা।
সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যালিস্টার বার্ট, সাবেক আইনমন্ত্রী ক্রিসপিন ব্লান্ট, সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী স্যার নিকোলাস সোমেসসহ আরো অনেক ব্রিটিশ মন্ত্রী সাইয়েদা ওয়ার্সির সিদ্ধান্তকে নৈতিক ও সাহসী বলে উল্লেখ করেছেন। গত নির্বাচনে টোরি দলের পক্ষে যে ১২ শতাংশ মুসলিম ভোট পড়েছে তার ওপর এই পদত্যাগ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে। 
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের কাছে দেয়া তার পদত্যাগপত্রে সাঈদা ওয়ার্সি বলেন:
প্রিয় প্রধানমন্ত্রী,
কয়েক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন বৈঠক ও আলোচনায় আমি গাজা পরিস্থিতি এবং এনিয়ে আমাদের অবস্থান সম্পর্কে আমার খোলামেলা ও স্পষ্ট কথাগুলো বলেছি। মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রচেষ্টায় ব্রিটেনের সাধারণ নীতি অনুযায়ী আমার মতামতগুলো ছিল। কিন্তু অতি সম্প্রতি গাজা সংকট নিয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং সুর ছিল নৈতিকভাবে আপোষকামী/পক্ষপাতমূলক, যা ব্রিটেনের জাতীয় স্বার্থের অনুকূলে নয়, বিশ্বব্যাপী আমাদের সুনাম এমনকি দেশের অভ্যন্তরেও এর একটা ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে।
জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত, মানবাধিকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন মন্ত্রী হিসেবে আমি বিশ্বাস করি, গাজায় বর্তমান সংকটের ক্ষেত্রে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের মূল্যবোধের সঙ্গে যায় না। বিশেষ করে আইনের শাসনের বিষয়ে আমাদের যে অঙ্গিকার, আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারের প্রতি আমাদের যে সমর্থন তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। গত কয়েক সপ্তাহে কেন ক্লার্ক এবং ডমিনিক গ্রিয়েভ এর মতো দক্ষ ও বিশেষজ্ঞ সহকর্মীদের অনুপস্থিতি বেশ সুস্পষ্ট হয়েছে। [গ্রিয়েভ ছিলেন ক্যামেরন সরকারের প্রধান আইন কর্মকর্তা যিনি মানবাধিকার বিষয়ে বেশ সোচ্চার ছিলেন। কিছুদিন আগে করা মন্ত্রিসভার সংস্কারের সময় সরানো হয় অরেকমন্ত্রী কেন ক্লার্ককেও।] পদত্যাগপত্রের এক পর্যায়ে নিজের কিছু সতীর্থের প্রশংসা করেন ওয়ার্সি।
যা হউক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান সংঘাত নিয়ে সৃষ্ট বিতর্ক এবং গাজা পরিস্থিতির বিষয়ে আমাদের অবস্থান উগ্রপন্থার একটা কারণ হয়ে দেখা দিচ্ছে অদূর ভবিষ্যতে যার প্রভাব আমাদের ওপর পড়তে পারে। পার্টির নেতা এরিক ও উইলিয়ামের কাছ থেকে আমি সমঝোতার কৌশল শিখেছি। প্রয়োগবাদ ও বাস্তববাদের সঙ্গে আদর্শবাদের সমন্বয় শিখেছি। তবে আমি সব সময় বলেছি, দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক জীবনে নেয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ও সমর্থনের বিষয়গুলো রাজনৈতিক জীবনের পরেও আমার ওপর প্রভাব ফেলবে। সে কারণে আজকে পদত্যাগপত্র দেয়াটা আমার জন্য অত্যন্ত বেদনার। ব্রিটেনে উদ্ভূত সব সমস্যার মোকাবেলায় দল যদি সফল হয় এবং আজকের ব্রিটেনে বসবাসরত সব সম্প্রদায়ের প্রতি তারা যদি দায়িত্বশীল হয় তবে কনজারভেটিভ পার্টির নেতা হিসেবে আমি আমি আমার সমর্থন অব্যাহত রাখবো।
-সাইয়্যেদা ওয়ার্সি। সূত্র : রয়টার্স।
- See more at: http://www.dailyinqilab.com/2014/08/07/196825.php#sthash.A1JEzpKg.dpuf