মুফতি আমিনী (রঃ) কি শহীদ? একটি তত্ত্বসমৃদ্ধ বিশদ পর্যালোচনা।

অনেকেই গন্ডমূর্খের মতন একটি অবান্তর প্রশ্ন ছুঁড়েছেন। প্রশ্নটি সাবেক সংসদ সদস্য, ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটি ও ইসলামি ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান, শায়খুল মাশায়েখ, মুজাহিদে মিল্লাত শহীদ আল্লামা মুফতি ফজলুল হক আমিনীকে (রঃ) নিয়ে। গত ১২/১২/১২ তারিখে আল্লামা আমিনীকে (রঃ) ২১ মাস ২১ দিন গৃহবন্দীসহ  আওয়ামী সরকারের শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন সহ অমানবিক আচরণের ফলে ১২টা ১২ মিনিটে তিনি শাহাদাতবরণ করেন (انا لله وانا اليه راجعون)।



গৃহবন্দী অবস্হায় মৃত্যু হলেই কি শহীদ বলা যাবে??? ২০০৭ সালের দিকে আমিনী (রঃ) ব্রেইন স্ট্রোক করেন। গুরুতর অবস্হায় হুজুরকে ক্লিনিকে ভর্তি করানো হয়।
সেদিন মহান আল্লাহর অশেষ কৃপায় ডাঃ মহোদয়ের সুচিকিৎসার প্রয়োগে আল্লামা আমিনী সাহেব (রঃ) নতুন জীবন ফিরে পান।তবে এখন আর সেই স্বাভাবিক জীবন-যাপন নেই।তাঁকে প্রতিনিয়ত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হচ্ছে, নিতে হচ্ছে নিয়মিত চিকিৎসা আর থেরাপি।শত অসুস্হতা সত্তেও ধর্মের ক্ষেত্রে কোন পার্থিব সমস্যা তাঁকে একচুল পরিমাণ ইসলামী আন্দোলন থেকে  ব্যাহত করতে পারেনি। বরং দূর্দান্ত গতি আর সাহসিকতা নিয়ে
অব্যাহত আছে, রাজপথ কাঁপানো আন্দোলন,  বজ্র হুঙ্কার আর অগ্নিঝরা ভাষণ। এসব নাস্তিকদের সহ্য হয়নি।আওয়ামী ফ্যাসিবাদি সরকার এই ভিনগ্রহের হায়েনাগুলির প্ররোচনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আল্লামা আমিনীর গ্রেফতারি পরওয়ানা জারি করে। এবং তাঁকে কয়েকদিনের মধ্যেই গ্রেফতার করে প্রশাসন। প্রায় ৩ মাস কারাবন্দীর পর তিনি জালিমের বিভীষিকাময় কারাগার থেকে মুক্তি পান।জেল থেকে মুক্তি পেতেই তিনি পূর্বের তুলনায় আরো একধাপ এগিয়ে সক্রিয়ভাবে রাজপথ কাঁপানো আন্দোলন করে যাচ্ছিলেন।
নাস্তিকদের গায়ে শুরু হলো ভীষণ জ্বালাপুড়া। মূহুর্তের জন্যও তারা সহ্য করতে
পারছিলনা আমিনীকে (রঃ)। অবশেষে সরকার গুম করলো কলিজার
টুকরো সন্তান মাওলানা হাসনাত আমিনীকে।
শান্তিতে থাকতে পারলনা তাকেও আটকে রেখে। আমিনীর (রঃ) বজ্রহুঙ্কারে ২৪ ঘন্টার মধ্যে সরকার তাকেও হাজির করতে বাধ্য হলো। তাতেও ব্যর্থ হয়ে সরকার গৃহবন্দী করলো মুফতি আমিনীকে (রঃ)।
ঠিক মতন চিকিৎসার অনুমতি দিতনা জালিম সরকার। কখনো দেয় আবার কখনো দেয়না। তবে না দেয়ার সংখ্যাই ছিল বেশী। ডাঃ বলেছিলেন আপনাকে প্রতি ৭মাসের মধ্যেই ব্রেইন থেরাপিটি গ্রহণ করতেই হবে, অন্যতা যে কোন সময় যে কোন ধরনের বড় এক্সিডেন্ট হতে পারে।
প্রথম দুই সাত মাসে অনেক কষ্টে অনুমতি দিলেও শেষ ৭ মাসের শেষে সরকারকিছুতেই থেরাপি নিতে অনুমতি দিচ্ছিলেন না তাঁকে।ধীরে ধীরে এগুচ্ছিলেনতিনি মৃত্যুর দিকে। অবশেষে ১২-১২-১২ ইংরেজী ১২টা ১২
মিনিটে তিনি ইহধাম ত্যাগ পূর্বক সাড়া দেন মহান প্রভুর সান্নিধ্যে।انا لله وانا الـــــــيه راجعون))

বিশ্বনবী মোহাম্মদ (সঃ) শহীদ ছিলেন কি??? আল্লাহর মনোনীত পিয়ারা নবীগন যখন রাব্বে কারীমের দরবারে কোন কিছুর ফরিয়াদ করতেন, আল্লাহ্ তায়ালা তা সাথে সাথেই কবুল আর মনজুর করে নিতেন।
সে সুবাদে আমাদের প্রিয় নবী, প্রাণের স্পন্দন নবীকরীম মোহাম্মদ (সঃ) তাঁর জীবদ্দশায় সারাটি জীবন শহীদি মরণের তামান্না বা আকাঙ্কা করতেন।এবং মহান প্রভুর দরবারে তার জন্য দোয়াও করতেন। আল্লার রাসুলের (সঃ) দোয়া ও বদদোয়া
যেহেতু সাথে সাথেই কবুল হয় সেহেতু রাসুলের (সঃ) শহীদ হওয়ার ব্যাকুল তামন্না আগ্রহ উদ্দিপনা মহান দরবারে কবুল হয়েছে। তবে,,, বাহ্যিক দৃষ্টিতে আমরা দেখতে পাই!!! রাসূল (সঃ) শহীদ হননি, বরং তাঁর সাভাবিক ওয়াফাত (মৃত্যু) হয়েছিল। তাহলে কি আল্লাহর দরবারে তাঁর দোয়া কবুল হয়নি??? আসুন!!! এবার একটু হালকা পর্যালোচনা করা যাক।

মূলত শহীদ ২ প্রকার।
১. শহীদে হাক্বিকী। (যিনি একমাত্র আল্লাহর কালিমার ঝান্ডা উঁচু করার লক্ষে রণাঙ্গণে (আল্লাহর রাস্তায়) সসস্ত্র বা নিরস্ত্র শত্রুর হাতে নিহত হন)।
২. শহীদে হুকমী। সাধারণ মৃত্যু নয়, ঈমানের সহীত অসাধারণ মৃত্যু।
যেমন:-আগুনে পুড়ে মৃত্যু, গাড়ী এক্সিডেন্ট, পানিতে ডুবে মৃত্যু, নিরপরাধে নিহত হওয়া ইত্যাদি। তবে তালিবে ইলমের হুকুম আলাদা। এখন আল্লাহর রাসূল (সঃ) কোন শহীদের প্রকারে আছেন??? শহীদে হুকমী। কারণ সূরা নসর, ফালাক্ব, নাসসহ বিভিন্ন আয়াতের তফসীরে দেখতে পাই, রাসূলের (সঃ) মৃত্যু স্বাভাবিক হয়নি, বরং অভিসপ্ত ইয়াহুদীরা রাসূলের (সঃ) ১১টি চুল মোবারক নিয়ে ১১টি যাদু করেছিলেন। যার দরুন, যার ব্যথায় মাত্রাতিরিক্ত জ্বরের কারণে,কোটি কোটি উম্মতদের এতিম করে, শোকের সাগরে ভাসিয়ে ইহধাম ত্যাগ পূর্বক গ্রহন করেন রফীক্বে আ'লার সান্নিধ্য।সুতরাং, উপরোক্ত তথ্যবিত্তিক আলোচনার আলোকপাতে আমরা নির্ধিদায় বলতে পারি, আল্লামা মুফতি ফজলুল হক আমিনী (রঃ) "শহীদ", "শহীদ", "শহীদ"।
সুতরাং যারা তাকে দ্বীমত পোষণ করবে তারা অজ্ঞ, মূর্খ হিংসুটে বলে প্রমাণিত হবে।

বিঃদ্রঃ- সি, এন, এন. বিবিসি বাংলাসহ বাংলাদেশের সকল গনমাধ্যমে আমীনির মৃত্যুতে সরকারকেই দায়বদ্ধ করেছেন।তাছাড়া জানাজার আগে বিভিন্ন রাজনৈতিকনেতৃবৃন্দের দেয়া বক্তব্যে বলা হয়েছে, মুফতি আমিনীকে সরকার হত্যা করেছে। বক্তব্যগুলি নেটে ইউটিউবে আছে এখনো।চায়লে দেখে নিতে পারেনন।