এ সরকার জনগণের সরকার নয় :মাওলানা হাসানাত আমিনী

মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী বলেছেন, জনগণের ভোট ছাড়া অধিকাংশ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় এ সরকার জনগণের সরকার নয়। তাই এ সরকারের ক্ষমতায় থাকার নৈতিক বৈধতা নেই। এ সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় টিকে আছে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এ কথা বলেন তিনি।মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী ইসলামী ঐক্যজোটের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনীর ছেলে। তিনি প্রথম আলোচনায় আসেন নারীনীতি বাতিলের প্রতিবাদে ২০১১ সালের ৪ এপ্রিল হরতাল পালিত হওয়ার পর গুম ও ফিরে আসা নিয়ে। ২০১২ সালে পিতা মুফতি আমিনীর মৃত্যুর পর হাল ধরেন বাবার প্রতিষ্ঠিত সংগঠন ‘খেলাফতে ইসলাম’-এর। বর্তমানে তিনি এ সংগঠনের আমির। পাশাপাশি ইসলামী ঐক্যজোটের ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে দেশের বর্তমান রাজনীতি, আন্দোলনসহ সার্বিক বিষয়ে কথা বলেন
তিনি। মাওলানা হাসানাত আমিনী বর্তমান সরকার প্রসঙ্গে বলেন, দেশবাসী তাদের অনেক আগেই ‘না’ বলে দিয়েছে। বিষয়টি বুঝতে পেরেই সরকার দমন-পীড়নের পথ বেছে নিয়েছে। জনমত উপেক্ষা করে ইচ্ছামতো সংবিধান সংশোধন করেছে। ক্ষমতা দীর্ঘ করতে ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে তা-ই প্রমাণ হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে মুফতি আমিনীপুত্র বলেন, অতীতের যে কোনো সরকারের আমলের চেয়ে বর্তমানে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অত্যন্ত করুণ ও নাজুক। আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক কৌশলের আশ্রয়ে দেশকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে। দেশে আইনের শাসন বলতে কিছু নেই। পুলিশ-র‌্যাবকে দিয়ে বিরোধী দল-মত দমনের কাজ করে চলেছে। সরকার সমর্থক সংগঠনগুলোর নেতারা যে যেভাবে পারছেন চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জমি দখল, নারী অপহরণ, ধর্ষণসহ গণবিরোধী কাজ করে জনগণকে অতিষ্ঠ করে তুলেছেন। তাদের গুটিকয় হাইব্রিড নেতা এসব কাজে সন্ত্রাসীদের মদদ জোগাচ্ছেন। এভাবে একটি স্বাধীন দেশ চলতে পারে না। সম্প্রচার নীতিমালা প্রসঙ্গে মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী বলেন, প্রথমত, এ নীতিমালা প্রণয়নের আগে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করা হলেও তাদের মতামত অগ্রাহ্য করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, নীতিমালায় স্বাধীন সম্প্রচার কমিশন গঠনের কথা বলা হলেও তা কবে, কীভাবে ও কাদের নিয়ে গঠিত হবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য নেই। তৃতীয়ত, কমিশন গঠনের আগ পর্যন্ত এর কর্তৃত্ব তথ্য মন্ত্রণালয়ের হাতে ন্যস্ত রাখার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ যত দিন কমিশন গঠিত না হবে তত দিন তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাছেই বেসরকারি বেতার-টিভি জিম্মি হয়ে থাকবে। এটি গণতান্ত্রিক দেশে চলতে পারে না। এ নীতিমালার মাধ্যমে সরকার সংবাদপত্র, বেসরকারি বেতার-টিভির হাত-পা বেঁধে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। এ আইন চালু হলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতাই শুধু খর্ব হবে না বরং যে কোনো রাজনৈতিক দলও তাদের স্বাধীন মতামত ব্যক্ত করতে পারবে না। ফলে দেশ একনায়কতন্ত্রের দিকে চলে যাবে। আমরা অবিলম্বে এ কালো নীতিমালা বন্ধের দাবি জানাচ্ছি। সম্প্রতি পদ্মায় পিনাক-৬ নামের যাত্রীবাহী লঞ্চ দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে মাওলানা হাসানাত আমিনী বলেন, শত শত যাত্রী মারা গেছে, অনেক দিন হয়ে গেল। স্বজনদের ফুকফাটা কান্না আর গগনবিদারী আর্তনাদে পদ্মা পার পর্যন্ত কেঁপেছে। কিন্তু সরকার ইচ্ছা করেই লঞ্চটি উদ্ধারে টালবাহানা করছে। লঞ্চ ও যাত্রীদের লাশ উদ্ধার করতে না পারা এ সরকারের বড় ধরনের ব্যর্থতা। এর জবাব একদিন তারা পাবে। সাম্প্রতিক সময়ে সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীর দেওয়া বক্তব্য প্রসঙ্গে মাওলানা হাসনাত আমিনী বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষা, ওলামায়ে কেরামের যোগ্যতা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন। সাংবাদিকদেরও সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, সমাজকল্যাণমন্ত্রীর অসংলগ্ন কথাবার্তায় সচেতন ওলামা মহল বিস্মিত। তার বেসামাল বক্তব্য-বিবৃতি পুরো জাতিকে বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে।অবিলম্বে এই মন্ত্রীকে অপসারণ করা না হলে দেশের আলেম-ওলামাদের নিয়ে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। মাওলানা হাসানাত আমিনী বলেন, আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস মুসলমানদের ইমানের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আওয়ামী লীগ সংবিধান থেকে এটি তুলে দিয়ে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতিতে চরম আঘাত করেছে। পাশের একটি দেশের প্রেসক্রিপশনেই এ কাজ করা হয়েছে। এতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হবে। তিনি বলেন, সরকার ধর্মনিরপেক্ষতার যে ব্যাখ্যা করছে, তা বিভ্রান্তিকর এবং অপব্যাখ্যা। সরকার দেশের মুসলমানদের বোকা বানাতে চায়।